কার্বণিত রাখাল

রাখাল যদি সত্যিই কল্পনার জগতের চরিত্র হত, তাহলে কিন্তু কাহিনীটা হয়ত বেশীদূর গড়াত না । কারণ কল্পনা বুনে তোলা কল্কার মত রাখালের জীবনটাও হত ব্যালেন্সড আর পারফেক্ট । সে ডাইমেনশনের রাখাল কুহক দেশের সীমানা ছাড়িয়ে কয়েক পা হাঁটার পরেই কোথা থেকে এক কবুতর টুপ করে তার কাঁধে বসত । কয়েক দন্ড তীর বেগে ওড়ার ক্লান্তি জুড়িয়েই পায়ে বাঁধা লীপি তুলে দিত রাখালের হাতে ।

“রাখাল তুমি পারলে আমায় ফেলে রেখে চলে যেতে ? পারলে আমার নিশ্চিত বন্ধুহীনতা আর একাকীত্বের পরিণতি জেনেও দেশান্তরের পথে পা রাখতে ? চেয়ে দেখ আমার মায়াদন্ড আমি নিক্ষেপ করেছি উপলব্ধীর আগুণে । কালের অমোঘ নিয়মে আমার মায়াশহরের লুণ্ঠিত পরিত্যক্ত্য পরিণতি আজ আমার দু চোখ ভরে ডেকে আনছে হঠাত করেই হারিয়ে যাওয়ার ভয় । যে ভয়কে দুর্বলতা ভেবে এতদিন উপহাস করেছি, তার আর্তনাদ চাপা পড়েছে স্বার্থান্বেষী স্তাবকদের জয়ধ্বনীতে ।

রাখাল আজ যখন সন্ধ্যা নামছে পৃথিবীর বুকে তখন আমার মায়ায় আমার অলকাপুরীতে শরতের রোদ । কিন্তু আমি যে ক্লান্ত, একঘেয়ে জয়ধ্বনীর শব্দে । আমার অনন্ত যৌবন, আমার মাদকতার অভিশাপ আমার কন্ঠ রোধ করছে ।

রাখাল, আজ প্রাণ চাইছে মায়ার আবরণ সরিয়ে জগতের মুখোমুখি হতে । শরতের শ্যামলীমা আর নীলাকাশের অভিনয় কাটিয়ে গোধূলী ভরা সন্ধ্যাকে প্রত্যক্ষ্য করতে । হীরক খচিত কেয়ূরে পার্লার ফ্যাশনড কেশরাজীকে উন্মুক্ত করে দিয়ে তোমার হাত ধরে বেরিয়ে পড়তে পৃথিবীর খোঁজে । একটা বাস্তব দিনের শেষে, কোনো বন্য ঝরনার পাশে তোমার চওড়া বুকে মাথা রেখে মনের কবরে দাফন করা অনুভূতিগুলো পুনরজ্জীবিত করতে ।

আমায় সঙ্গে নেবেনা রাখাল ?”

***********************

কিন্তু দুঃখের কথা হল যে আমার কলমের ভিতর দিয়ে আপনাদের সামনা সামনি হেঁটে আসা রাখাল বাস্তবের এক কার্বণিত অনুলীপি । কার্বণের প্রলেপে তার রঙ কখনও চেঞ্জ হয়ে হয় নীল কখনও কাল, কিন্তু অবয়ব বদলায় না ।

তাই আমাদের রাখাল অবাস্তবের কবুতরের অর্থহীন অপেক্ষা করেনা । দিনের শেষে যখন আকাশে একটা দুটো করে তারা ফুটে ওঠে তখন ঘুমোতে যাওয়ার আগে তার বাঁশির সুর আকাশ বাতাসে ক্ষণিকের স্বপ্ন আঁকে । কিন্তু সে ক্ষণিক মাত্র … কাল যে তাকে আরও পূর্বে এগিয়ে যেতে হবে, মগ দেশের দিকে, অনেক পথ যে বাকি ………

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান